প্রায় ১৫ দিন ধরে কক্সবাজারের উপকূল থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে জেলার সমুদ্র উপকূলে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। এই কারণে উপকূলের সমুদ্রপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত গরম পানি উপকূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি সরে গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওই স্থানের পানির স্থান পূরণ করছে সমুদ্রের অপেক্ষাকৃত গভীর স্তরের বা তলদেশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ পানি। এই প্রক্রিয়াকে সমুদ্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে উপকূলীয় উত্থান বা কোস্টাল আপওয়েলিং।
খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ ঠান্ডা পানি যখন সমুদ্রপৃষ্ঠে চলে আসে, সমুদ্রের তলদেশ থেকে সমুদ্রের কোনো কোনো স্থানে ফাইটোপ্লাঙ্কটন নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শৈবালের সৃষ্টি হয়, যা জুয়োপ্লাঙ্কটন নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীর প্রধান খাদ্য হিসেবে গণ্য হয়।
জুয়োপ্লাঙ্কটন আবার ছোট মাছের প্রধান খাদ্য। ছোট মাছের হলেও বড় মাছেরও খাদ্য এগুলো। ১৫ দিন ধরে কক্সবাজার জেলার সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার উপকূলে সমুদ্রের পানিতে মাছের খাদ্যের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা দিয়েছে। তাই সেখানে ব্যাপক পরিমাণে মাছ, বিশেষ করে ছোট মাছের উপস্থিতি দেখা দিয়েছে। সমস্যাটা হয়েছে অনেক প্রকারের ফাইটোপ্লাঙ্কটনের (সহজ ভাষায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক গাছপালা) জীবনকাল খুবই স্বল্প (সাত দিনেরও কম)। এই সময়ের মধ্যে যদি সব ফাইটোপ্লাঙ্কটনকে যদি জুয়োপ্লাঙ্কটন পুরোপুরি খেয়ে না ফেলে, তবে অবশিষ্ট ফাইটোপ্লাঙ্কটন মরে গিয়ে সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে জমা হয়।
সমুদ্রের তলদেশে পতিত হওয়ার পর এসব জৈব পদার্থ যখন পচতে শুরু করে, তখন সমুদ্রের তলদেশ ও তার উপরিভাগের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে বা সোজা বাংলায় বলা যায়, খেয়ে ফেলে। ফলে সমুদ্রের তলদেশে কিংবা উপরিভাগের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ব্যাপক কমে যায়। এর ফলে ওই স্থানের পানিতে থাকা ছোট মাছগুলো অক্সিজেনের অভাবে মরে যায় কিংবা অক্সিজেন–স্বল্পতার কারণে নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও জোয়ারের পানির চাপে উপকূলে আছড়ে পড়ে।
মোস্তফা কামাল
আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক
স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি
সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়
সাসকাটুন, কানাডা
পাঠকের মতামত